Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নে মাতৃত্বকালীন ভাতা ভোগিদের আবেদন গ্রহন করা হচ্ছে। আগ্রহীরা আজই আবেদন গ্রহন করুন
বিস্তারিত

পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য দরিদ্র নারীকেও অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করতে হয়। কিন্তু মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের শারীরিক অবস্থা। সন্তানসম্ভবা হওয়ার শেষদিকে বা মাতৃত্বকালীন অবস্থায় তাদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হয় না। তখন পুষ্টিকর খাবার বা ভরণ-পোষণের অভাবে মা অসহায় হয়ে পড়েন। এদিকে শূন্য থেকে ৫ বছরের মধ্যে শিশুর ৯০ শতাংশ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হয়। তাই এ সময় মা ও শিশুর পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। কিন্তু দরিদ্র মায়েরা শিশুকে এ সময় পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারেন না। 

এ কঠিন অবস্থা থেকে দরিদ্র মাকে কিছুটা স্বস্তি দিতে সরকার ২০০৮ সাল থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া শুরু করে। কমপক্ষে ২০ বছর বা এর বেশি বয়সের মাতৃত্বকালীন অবস্থায় যে কোনো নারী এ সেবা পেতে পারেন। বর্তমানে একজন হতদরিদ্র মা ২ বছর পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন ভাতা পেয়ে থাকেন। শুরুতে এ ভাতা ছিল ৩৫০ টাকা। বর্তমানে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। বছরে চারবার এ ভাতা দেওয়া হয়।

দরিদ্র মায়েদের অবস্থা বিবেচনা করে আসন্ন বাজেটে মাতৃত্বকালীন ভাতা বাড়ছে। একইসঙ্গে এদের আওতাও বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে একজন দরিদ্র মা মাসে ৫০০ টাকা করে মাতৃত্বকালীন ভাতা পান। এ ভাতা ৮০০ টাকা করা হচ্ছে। সারা দেশে এখন ৮ লাখ দরিদ্র মা মাতৃত্বকালীন ভাতা পান। আসন্ন বাজেটে এর আওতা আরও এক লাখ বাড়ানো হচ্ছে। মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির ভাতা প্রদান প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করতে জিটুপি (গভর্মেন্ট টু পেমেন্ট) সিস্টেম চালু করেছে সরকার। ডিজিটাল এ পদ্ধতিতে এখন থেকে সরকারি কোষাগার থেকে সুবিধাভোগীদের ভাতা তাদের ব্যাংক অথবা মোবাইল ব্যাংক অথবা পোস্টাল অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানো হবে।

নতুন এ ব্যবস্থায় সুবিধাভোগীর নিজের পছন্দের ব্যাংক অথবা মোবাইল বা পোস্টাল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভাতার অর্থ জমা হবে এবং তিনি এসএমএসের মাধ্যমে অর্থ জমার বিষয় জানতে পারবেন। এ পদ্ধতির আওতায় মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচিও রয়েছে। বর্তমানে সাতটি উপজেলায় এ পদ্ধতি চালু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, ঢাকার সাভার, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও কালিয়াকৈর এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরব। এসব এলাকার মাতৃত্বকালীন ভাতা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের ভাতা প্রদানের মাধ্যমে পাইলট ভিত্তিতে এ পদ্ধতি চালু হয়।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, একজন সুস্থ মা-ই পারেন একটি সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে। আর একটি সুস্থ সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সুস্থ স্বাভাবিক শিশুর বিকল্প নেই। সুস্থ স্বভাবিক শিশুর জন্ম নিশ্চিত করতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান প্রতিটি মা মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসেবে ৫০০ টাকা করে পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরে এ ভাতার পরিমাণ প্রতিমাসে ৫০০ টাকা হতে ৮০০ টাকায় বৃদ্ধি করা হবে। 

গবেষণায় দেখা গেছে শূন্য থেকে ৫ বছরের মধ্যে শিশুর ৮০ শতাংশ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধিত হয়। এ সময় মা যদি পুষ্টিকর খাবার না খায় তাহলে শিশু অপুষ্টিতে ভোগে এবং তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ  সাধিত হয় না। সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, শূন্য থেকে ২ বছর মেয়াদে শিশুর বিকাশে সহযোগিতা করাই এ ভাতার লক্ষ্য। কিন্তু দুই বছর পর এ ভাতা বন্ধ করে দিলে শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে তাই সরকার এর মেয়াদ ৪ বছর করার চিন্তাভাবনা করছে।

মহিলা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভোলা জেলায় সাড়ে ৭ হাজার নারীকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মাতৃত্বকালীন ভাতা। জেলার সাত উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নে ৭ হাজার ৪১২ মায়ের জন্য প্রত্যেককে মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ৬ মাস পর পর উপকারভোগীর নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাব নম্বরে ৩ হাজার টাকা করে জমা হয়। আর বছরে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়ার পরিমাণ সাড়ে ৪ কোটি টাকা।

সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিনমজুর জাহাঙ্গির। মা, বাবা, ছোট বোন ও স্ত্রী জান্নাত বেগমকে নিয়ে তার অভাবের সংসার। জান্নাত সন্তানসম্ভবা। তাই মাতৃত্বকালীন ভাতায় তিনি স্ত্রীকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে পারছেন। জাহাঙ্গির বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বাড়তি টাকা দিয়ে স্ত্রীর জন্য পুষ্টিকর খাবার কেনা সম্ভব নয়। এখন সরকারি টাকায় স্ত্রীকে বিভিন্ন খাবার কিনে খাওয়াতে পারছি। জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জেবুন্নেছার বরাত দিয়ে অধিদপ্তর জানায়, মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যু রোধের লক্ষ্যে গর্ভকালীন বা প্রসবের পর মা ও শিশুর পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্যই এ ভাতা চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সম্বন্ধে বিভিন্ন পরামর্শমূলক সেবা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত প্রথম অথবা দ্বিতীয় গর্ভকালীন সময়ে ২ বছর মাসিক এ ভাতার টাকা দেওয়া হয়। 

মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বিগত বছরে প্রত্যেক ইউনিয়নে ৫৭ ভাতাভোগী থাকলেও চলতি অর্থবছরে তা ১০৯ জন করা হয়েছে। প্রতি বছরই ভাতাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি ২ বছর পর পর নতুন নামের তালিকা তৈরি করা হয়। ফলে কমছে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার। 

সূত্র আরও জানায়, ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে নদীর পাড়, বেড়িবাঁধ, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন এলাকার অসচ্ছল ও গরিব পরিবারের মায়েদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রেখে উপকারভোগীদের তালিকা তৈরি করা হয়।

ডাউনলোড
প্রকাশের তারিখ
09/10/2019
আর্কাইভ তারিখ
15/10/2019